‘ছাপা যন্ত্রের ত্রুটি ও চাহিদার তুলনায় বই কম থাকায়’ পাসপোর্ট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস। গত বুধবার এ নিয়ে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস। এতে আবেদনকারীদের নির্ধারিত তারিখের ১৫ দিন পর পাসপোর্ট নিতে আসতে অনুরোধ করেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, কুয়েত ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে, বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট যথাসময়ে বিতরণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তবে ছাপা যন্ত্রের ত্রুটির কারণে পাসপোর্ট বিতরণ বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘গতকালও ১৮ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে। মেশিন নষ্ট থাকলে কীভাবে তা সম্ভব হলো?’ তিনি বলেন, এ ধরনের প্রচার দালালদের উৎসাহিত করবে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদেশ থেকে আট লাখ পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পাসপোর্ট বই ছাপানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া পাসপোর্ট ছাপানোর তিনটি যন্ত্র নয় বছরের পুরোনো। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো যন্ত্রে ত্রুটির কারণে দু-তিন ঘণ্টা কাজ বন্ধ থাকে।

দূতাবাসগুলোর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা বেশি এসেছে। সৌদি আরবে এ সময়ে ওমরাহ পালন করতে যাচ্ছেন অনেকে। এসব কারণেও চাহিদা বেড়ে গেছে। আর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার। ৩০ জুনের মধ্যে সে সুযোগ নেওয়া যাবে। এ কারণেও সেখানে পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা বেড়েছে।

দেশে প্রতিদিন পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার। এখন দিনে ১০ থেকে ১২ হাজার বই ছাপানো হচ্ছে বলে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

গত বুধবার কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) জহিরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত পাসপোর্ট ডেলিভারি–সংক্রান্ত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে পাসপোর্ট প্রিন্টিং যন্ত্রে ত্রুটির কারণে যথাসময়ে পাসপোর্ট প্রস্তুত না হওয়ায় নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাসপোর্ট সরবরাহের নির্ধারিত তারিখের ১৫ দিন পর তা নিতে দূতাবাসে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

গতকাল সেখানে ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হওয়ায় রাষ্ট্রদূত অতিথিদের অভ্যর্থনায় ব্যস্ত রয়েছেন। মিজানুর রহমান দূতাবাস থেকে পাসপোর্ট–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারির তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সমস্যাটি বাংলাদেশ থেকে হচ্ছে। সেখানে (ঢাকা) প্রিন্টিং মেশিনে ত্রুটি থাকায় চাহিদার তুলনায় বই ছাপানো যাচ্ছে না বলে জানতে পেরেছি।’

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) জহিরুল ইসলাম খান বলেন, দূতাবাস থেকে সাধারণত প্রতিদিন ২০০-২৫০ পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়। সংকটের কারণে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ প্রবাসীকে বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে জরুরি পাসপোর্টগুলো যথাসময়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে অসন্তোষ প্রকাশ করে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ রেজওয়ান বলেন, ‘তিনটি ছাপার মেশিনে পাসপোর্ট ছাপানো হচ্ছে। কোনো মেশিনই নষ্ট না। দূতাবাসের এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দালালদের উৎসাহিত করবে। তারা মেশিন নষ্ট হওয়ার অপপ্রচার চালিয়ে লোকজনকে বিভ্রান্ত করে টাকা আদায় করবে। গতকালও ১৮ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে। মেশিন নষ্ট থাকলে কীভাবে সেটা সম্ভব হতো?’

তবে পাসপোর্ট বইয়ের চাহিদা বেশি থাকার বিষয়টি স্বীকার করে মহাপরিচালক বলেন, ৬৫টি দেশে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাঠাতে হয়। কুয়েত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া আর ইতালি থেকে প্রচুর পাসপোর্টের চাহিদা এসেছে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশ তো আছেই। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মানে ওমরাহর জন্য দুই লাখের বেশি পাসপোর্টের চাহিদা এসেছে সৌদি আরব থেকে।