ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ডাকাত আসছে এমন আতঙ্কে মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। মাইকিং শোনার পর এলাকার লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় পাহারা দেন। পাশাপাশি জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে রাতে কোনও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১২টার দিকে নাসিরনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ও ইউনিয়নের কুলিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন, ‘পুলিশ বলছে ডাকাত আসতে পারে’। এই ঘোষণা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে ডাকাত আতঙ্ক। নির্ঘুম রাত কেটেছে গোটা উপজেলাবাসীর।

খোঁজ নিয়ে ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মোখলেছুর রহমান এলাকার মসজিদে মাইকে ঘোষণা করেন, ডাকাত আসতে পারে, এতে সবাই ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসুন। মসজিদের মাইকে এই খবর প্রচার হওয়ার পর মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু সকালে বিভিন্ন ইউনিয়নে খবর নিয়ে জানা গেছে, কোথাও কোনও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।’

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ‘ডাকাত আসছে’ খবরটি মসজিদের মাইকে শোনার পর অনেকেই বিশ্বাস করে আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে সারা রাত সজাগ থাকতে বলেন। এরপরই একযোগে সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে থাকেন।

খবর পেয়ে জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় টহল দেয়। পাশাপাশি গ্রাম পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সমন্বয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়।

এই বিষয়ে মাইকে ঘোষণা দেওয়া মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফোন করে  জানায়, নাসিরনগরে ডাকাত আসছে। যেকোনও সময় যেকোনও গ্রামে প্রবেশ করে ডাকাতি করতে পারে, তাই আপনারা সর্তক থাকুন এবং গ্রামের নিরাপত্তা দিতে স্থানীয়দের নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করুন। আমরা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কাজ করেছি।’

উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের মো. আব্দুল হাকিম তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘২৩ জনের একটি ভয়ংকর ডাকাত গ্যাং নাসিরনগর প্রবেশ করেছে, সবাই সাবধান।’

এ বিষয়ে নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘রাতের বেলা ওসি সাহেব আমাকে ফোন দিয়ে ডাকাতের বিষয়ে সর্তক থাকার অনুরোধ জানান। পরে আমরা জনগণকে নিয়ে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাহারা দিয়েছি। তবে উপজেলায় কোনও ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।’

নাসিরনগর থানার ওসি মো. হাবিবুল্লাহ সরকার বলেন, ‘হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, মাধবপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে নাসিরনগর উপজেলার মানুষকে সর্তক করতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে এবং কিছু কিছু এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ফোন করে বলা হয়েছিল সর্তক থাকতে, কোনও তথ্য পেলে পুলিশকে জানানোর জন্য। কিন্তু এই ঘটনাকে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কেউ অতিরঞ্জিত করেছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘সম্প্রতি সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার কয়েকটি উপজেলায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে আমরা নাসিরনগরের লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছি এবং হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলা থেকে নাসিরনগর উপজেলার প্রবেশ মুখ এবং মাধবপুর উপজেলা থেকে নাসিরনগর উপজেলার প্রবেশ মুখে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়েছিলাম।’