লোকালয় ২৪

হবিগঞ্জে কোটিপতির বিপক্ষে দুই লাখপতির লড়াই! এ নিয়ে জেলা জুড়ে নানা আলোচনা

ঘনিয়ে আসছে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনী এক কোটিপতি প্রার্থীর বিপক্ষে লড়ছেন দুই লাখপতি প্রার্থী। এ নিয়ে জেলায় আছে নানা আলোচনা।

এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ে বাদ পড়েন যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহীন আহমেদ। যদিও তিনি বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।

নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন অপর তিন প্রার্থী। তারা তারা হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমানে জেলা পরিষদের প্রশাসক ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জাতীয় পার্টি নেতা অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু নঈম মো. শিবলী খায়ের ও আইনজীবী মো. নুরুল হক। নির্বাচনে কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামা নিজেদের জীবন বৃত্তান্ত ও সম্পদের হিসাব তুলে ধরেছেন তাঁরা। তাঁদের হলফনামায় দেখা যায় তিনজনই শিক্ষিত। তবে অর্থ সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। হবিগঞ্জ ছাড়িয়ে রাজধানীতেও রয়েছে তার সহায় সম্পত্তি।

হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ডা. মুশফিকের নগদ অর্থ সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫৪ টাকা। আর প্রতিদ্বন্দ্বী অপর দুই প্রার্থী অর্থ-সম্পদ মিলিয়ে লাখপতির কোঠায়। তাদের মধ্যে মোল্লা আবু নঈম মো. শিবলী খায়ের যৌথ সম্পদ ব্যতিরেকে ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার মালিক। এছাড়া অপর প্রার্থী মো. নুরুল হকের আসবাবপত্র, স্বর্ণসহ অর্থ সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছে ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

হলফনামায় দেখা গেছে, শিক্ষায়, অর্থ সম্পদে বলিয়ান আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান প্রশাসক ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস, ব্যবসায় প্রাইভেট প্র্যাক্টিশনার। চিকিৎসক মুশফিকের নামে একটি ফৌজদারি মামলা চলছে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে। তিনি বছরে আয়ের উৎস দেখিয়েছেন কৃষিখাতে ২৫ হাজার টাকা, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান ভাড়া থেকে ১২ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্যাংকে আমানত আছে ২ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা, পেশা থেকে (পরামর্শ বাবদ) আয় ৫৫ হাজার ৪৬১ টাকা, ফার্মের আয় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৩০ টাকা, সম্মানীভাতা বাবদ ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, অন্যান্য খাতে আয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৫ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ দেখিয়েছেন ৩ লাখ ১০ হাজার ১৫৩ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমাণ ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ২৩৫ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত ৫০ লাখ টাকা, গাড়ি আছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের, তবে সংখ্যা উল্লেখ করেননি। স্বর্ণালঙ্কার নিজ নামে ২০ ভরি, তবে দাম উল্লেখ করেননি। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ২ লাখ টাকার। ডিপিএস আছে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৭ টাকার।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে ডা. মুশফিকের ৯ একর কৃষি জমি রয়েছে, একটি চারতলা দালান, রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনে ছয়তলা ভবন। তবে ব্যাংকে কোনো দায়-দেনা নেই। এছাড়া হলফনামায় নির্ভরশীলদের ওপর আয় ও স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ দেখাননি তিনি।

পেশায় আইনজীবী মোল্লা আবু নঈম মো. শিবলী খায়ের’র শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলবি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি আয়ের উৎস দেখিয়েছেন আইন পেশা থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ দেখিয়েছেন ৫০ হাজার ও ব্যাংকে জমা ১ লাখ টাকা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে ৪ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বর্ণ ১০ ভরি দেখালেও দাম উল্লেখ করেননি। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্রের নাম-সংখ্যা উল্লেখ করলেও মূল্য দেখাননি। তার স্থাবর সম্পাদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় ১৪ শতকের বসতবাড়ির ১১ ভাগের ২ অংশের মালিক এই প্রার্থী। তাঁর ব্যাংকে দায়-দেনা নেই।অপর প্রার্থী মো. নুরুল হক শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ, এলএলবি। পেশায় আইনজীবী এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। ব্যবসা থেকে নিজের আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ (ব্যবসার পুঁজি) ১৬ লাখ টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণেও ক্রয়কালীন মূল্য দেখান ৮০ হাজার টাকা, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ১ লাখ টাকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় রয়েছে কৃষি, অকৃষি ও দোকান কোঠা। তবে ব্যাংকে কোনো দায়-দেনা নেই।