লোকালয় ডেস্কঃ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে নোট-গাইডের বেশ প্রাধান্য, শিক্ষার মানোন্নয়নে তা রোধ করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কলেজ পারফরমেন্স র্যাংকিং ২০১৬ ও ২০১৭’ অ্যাওয়ার্ড ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
দীপু মনি বলেন, “সারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৮ লাখ।”
এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্ববিদ্যালয় মানের শিক্ষা লাভ করতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে প্রত্যেকটি বিভাগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস করা যায় কি না সেটা নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় মানের শিক্ষা লাভ করতে পারবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সারা বছর কোনো না কোনো পরীক্ষা থাকে। এতে পাঠদান ব্যাহত হয়। তাই শুধু পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্র নির্মাণ করা যাতে পারে, যেখানে শুধু পরীক্ষাই হবে। অন্য কোনো কিছু নয়।”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আগে বলা হত এটা মালটানা রেলগাড়ির মতো। কিন্তু এখন এটি সম্পর্কে বলা হয় দ্রুতগামী আন্তঃনগর ট্রেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির এই যে অগ্রযাত্রা সেটি অব্যাহত থাকবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।”
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র্যাংকিং ২০১৬ ও ২০১৭-এর পুরস্কার ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
শিক্ষকদের শুধু চাকরির মানসিকতা নিয়ে পাঠদান করলে চলবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শিক্ষকদের দায়িত্ব নিয়ে পাঠদান করতে হবে। বর্তমান সময় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। শিক্ষার্থীদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় শিক্ষা দান করা যায়।”
অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্য চ্যালেঞ্জ ছিল সেশনজট নির্মূল করা, ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সেই সেশনজট দূর করা হয়েছে। বর্তমানে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেখানে সারা বছরের ভর্তি, পরীক্ষা, ফল প্রকাশসহ একাডেমিক সকল কার্যক্রমের অগ্রিম দিন-তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা-৪ বাস্তবায়নে আমরা কলেজে র্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করেছি। এতে করে দেশের কলেজগুলোর অবস্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে।
“যারা খারাপ করছে তারাও নিজেদের অবস্থান দেখতে সেসব কলেজেরও পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে, আর যারা ভালো করছে তাদের অনুসরণ করে তারা নিজেদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এগিয়ে যেতে পারবে।”
অনুষ্ঠানে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭১৮টি স্নাতক (সম্মান) পাঠদানকারী কলেজের মধ্যে জাতীয়ভিত্তিক স্কোরে ২০১৭ সালের ৫টি সেরা কলেজ, একটি সেরা মহিলা কলেজ, একটি সেরা সরকারি কলেজ ও একটি সেরা বেসরকারি কলেজের নাম ঘোষণা করেন উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।
এছাড়া বিভিন্ন র্যাংকিংয়ে সেরা অঞ্চলভিত্তিক আরও ৬৮টি কলেজের নাম ঘোষণা করেন তিনি। কলেজগুলোকে অ্যাওয়ার্ড, সনদ ও চেক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
সারা দেশের পাঁচটি সেরা কলেজ নির্বাচিত হয়েছে- রাজশাহী কলেজ (৭২.৯৬), বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ (৬৬.১৫), বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ (৬৬.১১), পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ (৬৫.৯৬) ও রংপুরের কারমাইকেল কলেজ (৬৫.৭৯)।
জাতীয় পর্যায়ে সেরা মহিলা কলেজ নির্বাচিত হয়েছে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ (৫৯.১০), সেরা সরকারি কলেজ হয়েছে রাজশাহী কলেজ, (৭২.৯৬) এবং সেরা বেসরকারি কলেজ নির্বাচিত হয়েছে ঢাকা কমার্স কলেজ (৬১.৮৪)।
ঢাকা অঞ্চলে সেরা নির্বাচিত হয়েছে ঢাকা কমার্স কলেজ (৬১.৮৪), টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজ (৬১.৭৮), ঢাকার তেজগাঁও কলেজ (৫৯.৮৯), সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রি কলেজ (৫৯.৬৪), লালমাটিয়া মহিলা কলেজ (৫৯.১০), সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ (৫৯.১০), ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ (৫৮.৫০), সরকারি গুরুদয়াল কলেজ (৫৮.৩৮), হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ (৫৭.৯৩) ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, (৫৬.৮৩)।